ইতিহাসের যুগসন্ধিক্ষণে আবির্ভূত হবেন যে মানুষটি, যার হাতে রচিত হবে ইতিহাসের নতুন অধ্যায়, যাঁর জ্যোতির্ময় চিন্তার ছটায় ঝলকিত হবে পৃথিবী, তিনি যে চূড়ান্ত পর্যায়ের মেধাবী ও প্রজ্ঞাবান মানুষ হবেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
বলা হচ্ছে জগতের জ্যোতি, মমতার মিনার, প্রজ্ঞার পুষ্প মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কথা। নতুন শতাব্দীর তরুণ প্রজন্মের মাঝে নবিজির বর্ণাঢ্য জীবনকে আত্মস্থ করার যে উদ্দীপনা শুরু হয়েছে, তা যুগপৎ বিস্ময়কর ও আশাজাগানিয়া। পাঠকের বিপুল চাহিদার ভিত্তিতে প্রতিনিয়ত তাই প্রকাশিত হচ্ছে নবিজীবনের ওপর রচিত নানা আঙ্গিকের সাহিত্য।
তবে, মাত্র ২৩ বছরের রিসালাতি জীবনে যে মেধা, প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা দিয়ে তিনি ইতিহাসের খোলনলচে বদলে দিলেন, সেই প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতার গল্পগুলো অচর্চিত রয়ে গেছে আমাদের সমাজে।
প্রজ্ঞায় যাঁর উজালা জগৎ বইতে লেখকের মনোহর বর্ণনায় নবিজির প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক গল্পের পাঠ আনন্দময় হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
ঊষর মরুর বুকে বেড়ে উঠা একজন ব্যক্তির পক্ষে কি গোটা বিশ্ব খোলনলচে বদলে দেওয়া সম্ভব? তাও আবার মাত্র তেইশ বছরের সংক্ষিপ্ত মিশনে? হ্যাঁ, অসামান্য যোগ্যতা আর ধীশক্তির গুণে এই অসাধ্যকেই সাধন করেছিলেন বিশ্বমানবতার নবি মুহাম্মাদ ﷺ। একাধারে তিনি ছিলেন আল্লাহর রাসূল, তুখোড় রাজনীতিবিদ, বীর যোদ্ধা, অন্তরঙ্গ বন্ধু এবং অনুপম ব্যক্তিত্বের অধিকারী।
একজন মানুষের পক্ষে সকল দিক থেকে যতটা জিনিয়াস হওয়া সম্ভব, তার সবটুকুই নিজ চরিত্রে প্রতিফলিত করেছিলেন রাসূল ﷺ। জীবনের প্রত্যেক পরতে কীভাবে তিনি অনন্য প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেলেন, তারই সুখপাঠ্য পর্যালোচনা হাজির করা হয়েছে এই বইটিতে। পাশাপাশি মুমিনের জন্য পেশ করা হয়েছে ওহির বিধান এবং নবিজির আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আলোকিত জীবন গড়ে তোলার পথনির্দেশিকা।
নবিজির ﷺ মতো হওয়া কি খুব সহজ?
ঘরে এসে যখন শুনলেন খাবার নেই, তখন তিনি নফল সিয়ামের নিয়্যত করে ফেললেন। আমরা হলে কী করতাম?
প্রথম কয়েক বছর মানুষের কাছ থেকে বারবার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরও কীসের বলে নিরলস দ্বীন প্রচার করে গেছেন? কীভাবে অর্জন করলেন অটুট মানোবল? কীভাবে রপ্ত করলেন এক অসম্ভব সুন্দর ভাষা, যা শুনলেই মানুষের হৃদয়ে ছাপ ফেলে দিত? কেমন ছিল তাঁর শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য আর যৌবনের উচ্ছল দিনগুলো? নবিজির ﷺ জীবনী পড়তে গেলে আমরা সাধারণত তাঁর নবুওয়্যত পরবর্তী জীবনেই বেশি গুরুত্ব দিই, কিন্তু এর ভিত্তিটা যে মহান আল্লাহ তাঁর নবুওয়্যতপূর্ব ৪০ বছরের জীবনে ধীরে ধীরে তৈরি করেছিলেন, সেটা কজন ঘেঁটে দেখি?
প্রচলিত অর্থে কোনো সিরাত বই নয় এটি। কোনো তাত্ত্বিক ঘটনার বিবরণও না। এখানে আপনি পাবেন ব্যবহারিক কিছু জ্ঞান। হাতে-কলমে শিখবেন নিজের বাচ্চাকে নবিজির ﷺ মতো করে বড়ো করার উপায়। টিনএজ বয়সি হলে জানতে পারবেন এই উড়ুউড়ু সময়টাতে নিজেকে বাগে রাখার কৌশল। বিবাহিত হলে আছে দুজনে মিলে জীবনটাকে আরও মধুর করার টোটকা। সর্বোপরি নবিজির ﷺ মতো জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ‘স্মার্ট’ হওয়ার তরিকা। তবে চলুন স্মার্ট হই প্রিয় নবিজির ﷺ মতো…
বাচ্চা মানুুষ করা, আরও ভালোভাবে বললে ইসলামি আদর্শে মানুষ করা সহজ কথা না। আমাদের নিজেদের আর চারপাশের যা অবস্থা, তাতে বাচ্চাদের সুস্থ মানসিক বিকাশ এই সময়ে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। আমার বাচ্চারা আজেবাজে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ল কি না, মাদক ধরল কি না, গ্যাংবাজিতে জড়াল কি না, সবচেয়ে বড়ো কথা আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলকে ভালোবেসে ইসলামি আদর্শে বেড়ে উঠছে কি না -এ নিয়ে আমাদের সদা সংশয়।
তবে মজার বিষয়, অন্য আরও নানান সমস্যার মতো এই সমস্যাতেও ত্রাতা হিসেবে আছেন আমাদের প্রিয়নবি মুহাম্মাদ ﷺ। তাঁর নিজের চার কন্যা তো বটেই, তাঁর পবিত্র হাতে কত যে কিশোর-তরুণ সাহাবি মানুষ হয়েছেন, ইসলামি আদর্শের সেনানি হয়েছেন, তার সংখ্যা বেশুমার। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এন্তার শিশু-কিশোরের নেপথ্য রূপকার আমাদের নবিজি।
ভাববেন না সেই সময়ের চ্যালেঞ্জ আজ থেকে কোনো অংশে কম ছিল। কিন্তু স্মার্ট মানুষেরা নিজের প্রখর প্রজ্ঞা আর বুদ্ধির দীপ্তিতে পরিস্থিতি যা-ই হোক- সবকিছু নিজের অনুকূলে নিয়ে আসেন। বইটি পড়ে সন্তান মানুষ করার তেমনই কিছু স্মার্ট তরিকা জেনে নেব নবিজির জীবন থেকে।
মানবেতিহাসের শ্রেষ্ঠ গুণে গুণান্বিত মানুষ মুহাম্মাদ (সা.)। তাঁর অনুপম নেতৃত্বে ইসলামপূর্ব জাহেলি সমাজ পরিবর্তিত হয়ে সভ্যতার এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে অদ্যাবধি বৈশ্বিক প্রভাব বজায় রেখেছে। একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে নবিজি ছিলেন সুদক্ষ। ব্যবস্থাপক হিসেবেও তাঁর কোনো জুড়ি ছিল না। যুদ্ধের ময়দানে সেনাপতি হিসেবে তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। সর্বোপরি নেতৃত্বের প্রসঙ্গে নবিজি ব্যতীত প্রকৃষ্ট কোনো উদাহরণ নেই পুরো পৃথিবীতে; হবেও না কখনো। কেননা, তিনিই তো নেতৃত্বের সব গুণের আধার।
নবিজি হলেন সর্বজনীন ‘আল্টিমেট লিডার’। মুহাম্মাদ (সা.) দ্যা আল্টিমেট লিডার বইটি আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর ‘আল্টিমেট লিডার’ হয়ে ওঠার এক মহা উপাখ্যান।