পিতৃপ্রতিম বহুমাত্রিক লেখক বুলবুল সরওয়ার একদিন গল্পে গল্পে আমাকে বললেন- ‘বই যদি পড়তেই হয় তাহলে সিরিয়াস বই পড়বে।’ কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই আমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে আবারও বললেন- ‘আসমানী কিতাবগুলো সিরিয়াস গ্রন্থ বলেই সেগুলো পৃথিবীতে এতদিন টিকে আছে এবং মানুষ পড়ছে।’
‘আমার হজ’ একটা সিরিয়াস গ্রন্থ। লেখকের অন্তর্নিহিত দর্শন এবং বিশ্বাসজাত উপলব্ধি পরতে পরতে ফুটে উঠেছে এই গ্রন্থে। গ্রন্থটি হজব্রতের অভিজ্ঞতার বর্ণনা হলেও এটিকে একটি ভ্রমণগ্রন্থ বললেও ভুল হবে না।
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘মানুষ আপন অন্তরের গভীরতর চেষ্টার প্রতি লক্ষ্য করে অনুভব করেছে যে সে শুধু ব্যক্তিগত মানুষ নয়, সে বিশ্বগত মানুষের একাত্ম।’
আবুল হাসান মুহম্মদ বাশার সেই মানুষ, যিনি ব্যক্তিগত নন। লেখার মাধ্যমে এবং চিকিৎসক হিসেবে ব্যক্তির সীমাকে ছাড়িয়ে তিনি পৌঁছে গেছেন মানুষের কাছে। কাজেই তিনি এখন রবীন্দ্রনাথের সেই বিশ্বগত মানুষের একাত্ম। তীব্র পর্যবেক্ষণ দৃষ্টিভঙ্গি এবং ভাষার নিপুণতা তাঁর লেখার মুখ্য বিষয়।
সমকালীন যুগযন্ত্রণার নিরুচ্ছ্বাস আর্তি তাঁর লেখার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। ভাষার গঠনশৈলী সম্পর্কে তিনি উৎকেন্দ্রিক নন, অথচ সুনিপুণ দক্ষতায় তিনি সরাসরি চলে যান প্রসঙ্গের গভীরে। আত্মউপলব্ধি, আত্মপর্যালোচনা এবং আত্মপরিক্রমার মিশেলে তিনি নির্মাণ করছেন অবশ্যাম্ভাবী চিন্তার এক সরল জগৎ যা অচিরেই বিদ্বজ্জনের সামগ্রী হয়ে উঠবে বলে আমি বিশ্বাস করি।